কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর : কাঁথিতে শ্মশান দুর্নীতি মামলার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও ডেকে পাঠানো হল কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীকে (Soumendu Adhikari)। শুক্রবার বেলা ১১টায় তাঁকে থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণ জানিয়ে প্রায় দু’ঘন্টা পরে বেলা ১টা নাগাদ কাঁথি থানায় হাজিরা দিয়েছেন তিনি। সৌমেন্দুর আইনজীবির দাবী, “প্রায় ৮ মাস ধরে এই মামলার তদন্ত চলছে। সৌমেন্দু বরাবরই তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। এই নিয়ে আর নতুন করে কি তথ্য জানার আছে তা বোধগম্য নয়”।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার অব্যবহিত পরেই কাঁথি পুরসভার প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় শুভেন্দুর ছোট ভাই সৌমেন্দুকে। পরবর্তীকালে কাঁথি পুরসভার ক্ষমতা পুনরায় তৃণমূলের দখলে আসার পরেই সৌমেন্দু’র বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকা কালীন শ্মশানের জমির শ্রেণী পরিবর্তন না ঘটিয়েই সেই জায়গায় মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে তদন্তে একাধিকবার সৌমেন্দুকে কাঁথি থানায় ডেকে পাঠানো হয়।
তবে সৌমেন্দুর পক্ষ্যের আইনজীবি অনির্বাণ চক্রবর্তীর দাবী, “এর আগে প্রায় ৩ বার শ্মশান দুর্নীতি মামলায় তদন্তের জন্য সৌমেন্দুকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। আর প্রতিবারই তাঁকে আট থেকে দশ ঘন্টা থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এই নিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানোর পর আদালতের নির্দেশে সৌমেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে ২ ঘন্টার বেশী থানায় রাখা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিভিন্ন মামলায় তাঁকে প্রায় ৬ বার কাঁথি থানায় হাজিরা দিতে হয়েছে”।
অনির্বাণ জানান, “এর আগেও যতবার ডেকে পাঠানো হয়েছে ততবারই উনি হাজিরা দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ না থাকলেও উনি যে কোনও মামলায় তদন্তে সহযোগিতা করেছেন”। অনির্বাণ জানান, “আজ সৌমেন্দুকে কাঁথি থানার ২৬৫/২২ শ্মশানের মামলায় ডাকা হয়েছে। এর আগে ওনার কাছ থেকে অনেকগুলো ডকুমেন্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। পাশপোর্টের তথ্য, ১১ বছরের ব্যাঙ্ক ডকুমেন্ট সহ নানান ডকুমেন্ট উনি তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন”।
তিনি আরও জানান, “সৌমেন্দুকে আজ বেলা ১১টায় ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ওনার বাইরের খাওয়ার খাওয়ার বারণ আছে, তাই আমরা আবেদন করেছিলাম উনি খাওয়ার পর ওষুধ খেয়ে থানায় যাবেন। আজকে ১১টার সময় ডেকেছিলেন। আমরা জানিয়েছিলাম উনি খাওয়ার খেয়ে ১টার দিকে আসবেন। সেই মতোই আজ উনি থানায় এসেছেন কিছুটা দেরীতে”।
আইনজীবির আরও দাবী, “ শুভেন্দু অধিকারীর পরিচিতদের বিরুদ্ধে বহু মামলা মোকদ্দমা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এমনটাও প্রমাণিত, অভিযোগকারীই পরে দাবী করেছেন তাঁকে জোর করে মামলা করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এই মামলাগুলো আসলে কোনও ভিত্তি নেই” বলেই দাবী অনির্বাণের। যদিও এই বিষয়ে পুলিশের তরফে কোনও মন্ত্যব্য পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৩ ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কাঁথি থানা থেকে বেরিয়ে আসার পর সৌমেন্দু জানান, “উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতো আমাকে ২ ঘন্টার বেশি জেরা কয়া যাবে না বলা হয়েছিল। অথচ আজ ৩ ঘন্টা ধরে থানায় রাখা হল। তদন্তে কি হচ্ছে সেটা তদন্তকারীরা জানাবেন। তবে আমার তদন্তে সহযোগিতা করার কথা, আমি তাই করেছি। আজ থানায় ঢোকার সময় আমি একটি বই নিয়ে গিয়েছিলাম। এতে কেউ আপত্তি করেনি। আমাকে আগামী সোমবার আবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাকে যতবার ডাকা হবে ততবারই আসব। এতে আমার কোনও অসুবিধে নেই”।