নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর : ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হল নন্দীগ্রামের দাপুটে তৃণমূল নেতা আবু তাহের সহ ৩ জনকে। রবিবার সন্ধ্যে নাগাদ সিবিআইয়ের সমন চিঠি তাহেরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সোমবার বেলা ১১টায় হলদিয়ার একটি গেস্ট হাউসে তাঁদের হাজির হওয়ার কথা ছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে এনে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন গোপন তথ্য জানতে পেরে আজকের মতো সরাসরি সিবিআইয়ের হাজিরা এড়িয়ে গেলেন ৩ জনই।
আবু তাহের জানান, “আজ বেলা ১১টা নাগাদ হলদিয়ার সিপিটি গেস্ট হাউসে আমাকে হাজির হতে বলেছিল। আমি সহ সেক খুশনবি ও সেক আমানুলকে ডাকা হয়। তবে তার আগেই আজ আমি গোপন সূত্রে জানতে পারি হলদিয়ার নিম্ন আদালতে আমাদের গ্রেফতারের জন্য আপিল করেছে সিবিআই। এই কারনেই আমি আজ সরাসরি হাজির থাকব না জানিয়ে দিয়েছি”।
তাহের জানান, “আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আমার অনেক আগাম কর্মসূচী থাকে। অথচ প্রতিবারই ২৪ ঘন্টার নোটিশে আমাকে হাজির হতে বলা হয়। এর আগেও একাধিকবার আমাকে ডেকেছে, আমি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তবে আজ আমি সরাসরি হাজির থাকতে পারব না এই মর্মে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ইমেল মারফৎ সিবিআইকে জানিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে টেলিফোন কলে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন বলে সিবিআইকে জানিয়েছি”।
তাহেরের যুক্তি, “আগে আমাকে সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিল। এখন আবার একাধিক ধারা যুক্ত করে আমাকে অভিযুক্ত হিসেবে ডাকা হচ্ছে”। তাহের জানান, “নিহত দেবব্রতকে আমি আগে কখনও চিনতাম না। তাঁর বাড়িও আমি চিনি না। এরপরেও আমাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে”। তাহের আরও জানান, “আমি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলাম। সেটা খারিজ হয়েছে। তবে আগামী দিনে আবারও আমি আইনের দ্বারস্থ হব”।
কিন্তু এর জেরে আইনানুগ সমস্যায় পড়তে পারেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তাহেরের জবাব, “আগেও একাধিকবার টেলিফোনে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমি কখনওই সিবিআইয়ের সঙ্গে অসহযোগিতা করিনি”। তাহেরের দাবী, “আমাকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে গারদে ভরার চেষ্টা হচ্ছে”। তবে আগামী দিনে সিবিআই ডেকে পাঠালে যাবেন কিনা জানতে চাওয়ায় তাহেরের চটজলদি জবাব, “আমি তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে রাজি আছি”।
প্রসঙ্গতঃ গত ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরদিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি নন্দীগ্রামের চিল্লোগ্রামেও ব্যাপক দুষ্কৃতী তান্ডব চলে। বহু বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মারধর করা হয় বিরোধী গেরুয়া দলের সমর্থকদের। ৩মে দুষ্কৃতীদের হামলা থেকে নিজের বাড়ি বাঁচাতে গিয়ে লাঠির ঘায়ে গুরুতর জখম হন চিল্লগ্রামের দেবব্রত মাইতি। এর ১৩ দিন বাদে কলকাতায় চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় দেবব্রতর। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে সিবিআই এখন পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সেক সুফিয়ানের জামাই সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁরা এখনও জেল হেফাজতেই রয়েছে।
তবে আবু তাহেরকে বারেবারে সিবিআই সমন পাঠালেও তিনি সরাসরি হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন বারেবারেই। এবার নতুন করে হাজিরা এড়ানোয় সিবিআই কোন পদক্ষেপ নেয় সেদিকেই নজর থাকছে সবার।
মোবাইলে নিউজ আপডেটপেতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন, ক্লিক করুন Whatsapp