নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর : বীরভূমের বগটুই গ্রামের একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে একদল নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা এখনও তরতাজা। তারই মাঝে প্রায় একই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায়। গায়ের জোরে জমি দখল করে ক্লাব বানাতে বাধা দেওয়া অবাধ্য গৃহকর্তাকে শায়েস্তা করতে রাতের অন্ধকারে তাঁর বাড়িতে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় ঘরের মধ্যে ওই গৃহকর্তার দুই মেয়ে ছিলেন। তবে খবর পেয়েই পুলিশ ও প্রতিবেশীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। এরপরেই পুলিশ তদন্তে নেমে এই ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নন্দীগ্রামের উত্তর কেন্দেমারী গ্রামের বাসিন্দা ভীমচরণ দাসের একটি ৩ ডেসিমল জমিকে কেন্দ্র করে মাস কয়েক ধরে বিবাদের সূত্রপাত। জমিটি গ্রামের মন্দির সংলগ্ন হওয়ায় ভীমচরণ জায়গাটি মন্দির নির্মাণকল্পে দান করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় যুবকদের দাবী ছিল ওই জায়গায় ক্লাব নির্মাণ করার। এই নিয়েই ভীমচরণের সঙ্গে প্রায়শই ঝামেলা পাকাত গ্রামের ওই যুবকরা। রবিবার ভীমরচণ তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভীনরাজ্যে চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে যান। তাঁর বাড়ি পাহারায় আসেন দুই বিবাহিত কন্যা।
এমনই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ক্লাবের ছেলেরা। তাঁরা রবিবার ভীমচরণের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তবে পরিবারের তরফে তৎক্ষণাৎ নন্দীগ্রাম থানায় ফোনে অভিযোগ জানালে পুলিশ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে এসে দুই যুবককে পাকড়াও করে। সোমবার ধৃতদের হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের জামিনে মুক্তি দেন। এরপরেই ওই যুবকরা গ্রামে ফিরে এসে ভীমচরণের পরিবারকে চরম শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো মঙ্গলবার রাতে ভীমচরণের বাড়ি ঘিরে রেখে চারিদিক থেকে কেরোসিন তেল ছিটিয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালায়। সেই সময় প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার শুরু করেন মেয়েরা। সেই সঙ্গে পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়েই নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ ও ব্লক আধিকারীক ঘটনাস্থলে ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু করে। অবশেষে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলায় জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের শুক্রবার হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ৩ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পাল জানান, “গায়ের জোরে জমি দখলে বাধা পেয়ে বাড়িতে থাকা দুই মহিলাকে রাতের অন্ধকারে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মারার চক্রান্ত করেছিল। তবে পুলিশ দ্রুত চলে আসায় অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়”। এই ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন তিনি।
ভীমচরণের মেয়ে নিলীমা মন্ডল জানান, “মন্দিরের পাশে বাবার জমিতে গায়ের জোরে ক্লাব বানাতে চায় একদল যুবক। এতে বাধা পেয়েই রবিবার বাড়িতে হামলা চালায় তাঁরা। পুলিশ এসে ২ জনকে গ্রেফতার করে। সোমবার ধৃতরা জামিন পেয়েই দল বেঁধে হামলার ষড়যন্ত্র করে। মঙ্গলবার প্রথমে জনা ৪০ মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ভাঙচুর হামলা চালায়। এরপর রাতে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বাড়িতে কেরোসিন ছিটিয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা চালাতে থাকে। তবে পুলিশ ও ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারকে ঘটনাটি জানানোয় তাঁরা এসে আমাদের উদ্ধার করে”।
মোবাইলে নিউজ আপডেটপেতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন, ক্লিক করুন Whatsapp