নিউজবাংলা ডেস্ক : পরিবারের কেউ পরীক্ষায় বসলে পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত থাকা যাবে না বলে নিয়ম রয়েছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের। অথচ, সেই বিধি লঙ্ঘনের অভিযাগ উঠল খোদ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। হবিবুরের মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। কী ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পরিবারের সদস্য হয়েও উপদেষ্টা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে শিক্ষক মহলেও।
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক বিকাশ মণ্ডল বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষার্থীর পরিবারের কেউ কোনওভাবেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কোনও দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থা যে ক্রমশ তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে আরেকবার প্রমাণ করল।”দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস বলেন, “পরিবারের কেউ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলে সংসদের কোনও দায়িত্বে নৈতিকভাবে থাকা উচিত নয়। তবে বর্তমান শাসক দলের আমলে সবকিছুই সম্ভব। তারা কোনও নিয়মের ধার ধারে না। ইচ্ছে-খুশি মতো সবকিছুই করতে পারে।”
গত ২১ মার্চ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনার জন্য জেলা পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়। কমিটিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে কুড়ি জনের একটি নামের তালিকা জানানো হয়। সেখানেও হবিবুরের নাম রয়েছে। তিনি জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের কো-মেন্টর। শাসক দলের ওই নেতার মেয়ে এবার কাঁথির কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদন থেকে ‘হোম সেন্টারে’ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।
হবিবুরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কার্যত মান্যতা দিলেও তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি মিলন পাত্র বলেন, “পরীক্ষা কেন্দ্রের চারপাশে কোনওভাবেই পদাধিকারীরা থাকতে পারবেন না বলে নিয়ম রয়েছে। তবে উপদেষ্টা কমিটিতে থাকা যায় কিনা সেই নিয়ম আমার জানা নেই।” জেলায় এবার মোট পাঁচশোর কাছাকাছি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। সেই সব পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা ব্যবস্থা যাতে স্বাভাবিকভাবে হয় সে জন্য জেলা পর্যায়ে উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছে। যার মাথায় রয়েছেন জেলার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শুভাশিস মিত্র।
যুগ্মআহ্বায়ক রয়েছেন তমলুকের সমীর ভৌমিক এবং উপদেষ্টা রয়েছেন হাবিবুর রহমান। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত মিটিং এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পদাধিকারীদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা গিয়েছে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানকে। তারপরেও হবিবুরের দাবি, “পদাধিকারবলে আমাকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। তবে পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আমি যুক্ত হইনি।”
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পাশে দাঁড়িয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালন কমিটির জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক সমীর ভৌমিক। তাঁর যুক্তি, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার গোপনীয়তার বিষয়টি সরাসরি প্রশাসনের লোকজন দেখাশোনা করেন। আর পরীক্ষার আনুষঙ্গিক কাজকর্ম এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা তার তদারকি করে উপদেষ্টা কমিটি। তা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় হাবিবুর কোনও পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিদর্শনেও যাননি। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ডিআই (মাধ্যমিক) শুভাশিস মিত্র বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য উপদেষ্টা কমিটি করা হয়েছে। তবে ওই কমিটিতে কারা রয়েছে তা তালিকা দেখে বলতে হবে।”- তথ্যসূত্র-আনন্দবাজার পত্রিকা
মোবাইলে নিউজ আপডেটপেতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন, ক্লিক করুন Whatsapp