নিউজবাংলা ডেস্ক : অবিশ্বাস্যকর। দেশের স্বাধীনতা লাভের প্রায় ১২ বছর আগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিপতি রাজা ষষ্ঠ জর্জের অনুপ্রেরণায় রাজত্বের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে মেদিনীপুর জেলার এক দোর্দন্ডপ্রতাপ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার এম. ও কার্টার সাহেব ওড়িশা সীমানায় অবস্থিত দক্ষিণ – পশ্চিম বাংলার দাঁতনের হাই-ইংলিশ স্কুলের ‘সিলভার জুবিলী হোস্টেল’ নির্মাণের লক্ষ্যে তৎকালীন সময়ের হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রায় ১৫০০ টাকা অনুদান দিয়ে দিলেন সানন্দে।
এবং শুধু তাই নয়, ৫/৪/১৯৩৬ তারিখে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে দাঁতনে এসে সসৈন্য- সপারিষদ জেলাশাসক সাহেব ঘটা করে প্রস্তর ফলক উন্মোচন করে এক বৃহৎ এলাকার শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির উদ্দেশ্যে নির্মিত ছাত্রাবাসটির দ্বারোদ্ঘটন করলেন।
দেশের শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ইংরেজদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বাংলার একেবারে প্রান্তিক একটি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আজ থেকে ৮৫ বছর আগে এমন ঘটনা ঘটে গেছে কে জানতো ! ইতিহাসে তো এই কথা কোথাও লেখা নেই। দাঁতন হাইস্কুলের ইতিহাসেও চিরকাল অনুচ্চারিত থেকে গিয়েছিল বহু বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহাসিক নিদর্শনের কথা।
তবে, অবশেষে ৮৫ বছর পরে সেই হারিয়ে যাওয়া প্রস্তর ফলকটি উদ্ধার করে মেদিনীপুর জেলার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পেরেছেন ‘দ ণ্ড ভু ক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক সন্তু জানা। দীর্ঘ দিন ধরে নিরলস পরিশ্রমে ক্ষেত্র অনুসন্ধান করে, গবেষণা করে তিনি সম্প্রতি রচনা করেছেন ‘দাঁতনের ইতিহাসের আলোকে ঐতিহ্যের স্কুলবাড়ি : এক ঐতিহাসিক অনুসন্ধান’ নামক এক মহার্ঘ্য গবেষণা গ্রন্থ। উদঘাটন করেছেন ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহ্যশালী দাঁতন হাই স্কুলের চিরকালীন জন্ম রহস্য….
দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা বাংলার ঐতিহ্যবাহী দাঁতন হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাবর্ষ ১৯২৩ সাল বলেই সর্বজনবিদিত। কিন্তু দীর্ঘ ৩ বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে লেখক রচনা করেছেন বইটি। শতাধিক দুষ্প্রাপ্য দলিল, দস্তাবেজ, মানচিত্র, নথি ও আলোকচিত্র উদ্ধার করে লেখক প্রমাণ করেছেন, ১৯২৩ নয়, দাঁতন হাইস্কুলের রহস্যাবৃত প্রকৃত জন্মলগ্নকাল হল ১৮৬৮ সাল এবং এই প্রামাণ্য উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ যুগে দক্ষিণ-পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত ইতিহাসটাই একেবারে ভোল বদলে গেল।
মেদিনীপুর তথা বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসে এই অমূল্য গবেষণা গ্রন্থ চিরকালীন স্থান লাভ করবে বলে আশা করছেন লেখক। তৎসহ সেকালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তথা জমিদারদের অবদান, স্বাধীনতা সংগ্রাম, শিক্ষা ব্যবস্থায় মেদিনীপুর সিস্টেম প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে এযাবৎকাল অবধি অপ্রকাশিত বহু তথ্য ও প্রায় ৩০০ টি আলোকচিত্র প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থটিতে। ১৫০ বছরের অধিক সময়ের অতীত গৌরব নিয়ে আগামী ২০২১ সালে দাঁতন স্কুলের হাই-ইংলিশ স্তরের ১০০ বছর অর্থাৎ শতবর্ষকাল মহা সাড়ম্বরে উদযাপন করতে চলেছি আমরা ……। এ আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গর্বের মুহুর্ত হতে চলেছে।
আসলে সদ্য প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থটি যেনো একটি প্রান্তিক বিদ্যালয়ের কক্ষপথ ধরে সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা বাংলার ব্রিটিশ যুগের অনালোকিত ইতিহাস পরিক্রমণ। বিশেষজ্ঞদের অভিমত মেদিনীপুর জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এটি একটি আকর গ্রন্থ।
সম্প্রতি দাঁতন হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত দণ্ডভুক্তি বৈঠকে গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তনী বিজন বান্ধব শাঁড়েশ্বরি, কটকের রেভেন্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপিকা ড. রুমা সরকার সহ প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মন্মথ নাথ গোরায়, দাঁতন হাইস্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক সূর্য কান্তি নন্দ, বেলদা গঙ্গাধর একাডেমির প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল শিট, শিব শংকর সেনাপতি, সত্যজিৎ কর, সঞ্চালক ও লেখক অখিল বন্ধু মহাপাত্র, দাঁতন ভগবত চন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দাস, মনোহরপুরের রাজা তীর্থঙ্কর রায় বীরবর, অতুল কৃষ্ণ রায়, তুষার কান্তি পয়ড়া, পূর্ণিমা মহানতি, অবনতি জানা, অতনু নন্দন মাইতি, সূর্য নন্দী, বিশ্বজিৎ ঘোষ, চিকিৎসক প্রণব মহান্তি, শান্তি দেব ঘোষ প্রমুখ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে কলকাতা থেকে বইটি উদ্বোধন করেন নদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ও দাঁতন হাইস্কুলের প্রাক্তনী প্রায় ৯০ বছর বয়স্ক ড. নিমাই কুমার রায় মহাশয় এবং ব্যারাকপুরের গোপাল চন্দ্র মেমোরিয়াল কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা ড . যুথিকা রায়। ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চায় এই গ্রন্থটি চিরকালীন অনুপ্রেরণা হয়ে রইলো।
গ্রন্থ : দাঁতনের ইতিহাসের আলোকে ঐতিহ্যের স্কুলবাড়ি : এক ঐতিহাসিক অনুসন্ধান ।
লেখক : সন্তু জানা
উত্তরণ পাবলিশার্স, কলকাতা
পরিবেশক : দে বুক স্টোর (দীপু )
১৩ , বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট ,কলকাতা – ৭৩
প্রাপ্তিস্থান : মেদিনীপুর : ভূর্যপত্র ও মল্লিক পুস্তকলয় । দাঁতন : শ্রীধর বুক স্টল , নন্দন ।
অনলাইন : flipkart, amazone, speech bubble
যোগাযোগ : ৯৭৩৩৭৮৭৪১৫
আমার ঠাকুরদা ডাঃ কালীকিংকর দত্ত দাঁতের একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ছিলেন, বাবা ঁশ্রীফাল্গুনী দত্ত ছিলেন দাঁতন হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। ওনাদের মুখে স্কুল সমন্ধে অনেক কথা শুনেছি। এই বই হাতে পেলে আরও বেশি জানতে পারব।অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই সন্তু জানা মশাইকে।