নিউজবাংলা ডেস্ক : ক্রমেই রাজ্য রাজনীতিতে চর্চিত হয়ে উঠছেন শুভেন্দু অধিকারী। গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, বা নন্দীগ্রাম। প্রতিটি জায়গাতেই এক্কেবারে সোজা সাপটা কথাবার্তায় রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় তুলে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
কোলাঘাটে “জনগনের সেবক” হিসেবে উল্লেখ করে প্রথমবার নিজেকে তৃণমূল থেকে আলাদা করে দেখাতে শুরু করেন তিনি। এরপর শনিবার নন্দীগ্রাম কলেজ মাঠে বিজয়া সম্মীলনীর সভায় তাঁর একের পর এক বার্তা রাজ্য রাজনীতিকে উত্তাল করে দিয়েছে।
এদিনের সভায় দাঁড়িয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ঘিরে নানাবিধ বিতর্কে জল ঢেলে তিনি জানিয়ে দিলেন, “যতক্ষণ না আমার মুখ থেকে কিছু শুনছেন ততক্ষণ কারও কথা বিশ্বাস করবেন না। এই বাজারি সংবাদপত্রগুলোকে উপেক্ষা করে চলুন। নিজের কাজ নিজে করুন।”
তবে পদ নিয়ে তিনি যে মোটেই উদ্বিগ্ন নয় তাও এদিন তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময় আমার পদের পরিবর্তন হয়েছে, হতেও পারে। কখনও কোনও পদে নাই, শুধু কাঁথি পুরসভার সাধারণ একজন কাউন্সিলার। কখনও দক্ষিণ কাঁথির বিরোধী দলের এমএলএ। কখনও ২০০৪ সালে শুধু নন্দীগ্রামে বিরোধী দলের হয়ে লড়াইয়ের তকমা ছিল। কখনও সাংসদ, কখনও বিধায়ক-মন্ত্রী।”
কিন্তু এসবে কোনওদিন তিনি নিজের জায়গা থেকে সরে যাননি বলেই দাবী করেছেন শুভেন্দুবাবু। তাঁর মন্তব্য, “কোনওদিন সংকীর্ন কোনও রাজনীতি আমি করিনি। আমার কোনও অফিসে কেউ এলে দলমত নির্বিশেষে বিমুখ হয়ে ফেরে না। এটাই আমার বিশেষত্ব। ২০০৪ থেকে এ পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী কোনওদিন বদলায়নি।”
কিন্তু সম্প্রতি তিনি কিছুটা দুরুহ হয়ে উঠেছেন বলে বাঁকা মন্তব্য করেন অনেকেই। সেই প্রশ্নের জবাব তিনি নিজেই দিয়েছন এদিন। তাঁর মতে, “আমি সবার ফোন সরাসরি ধরি। কিন্তু অনেকেই লাউড করে সবাইকে শোনান আমার কথোপকথন। তাই এখন হোয়াটসঅ্যাপ বা ম্যাসেজেই বেশী যোগাযোগ রাখি। অনেকেই ফুলের মালা পরিয়েছেন, অনেকে আবার গালাগালি করেন। তবে আমি এইসব মেনে নিই। কারন জনপ্রতিনিধি হতে গেলে ধৈর্য আর সহ্য করার গুন থাকার দরকার আছে। আমারও সহ্য করার ক্ষমতা আছে, তাই সব সহ্য করে নিই।”
এদিন তিনি নন্দীগ্রামের এক নেতার নাম না করে জানান, “খুব খারাপ লাগে যখন দেখি কেউ কেউ অতীতকে ভুলে যায়। ২০০৩ সালে যাকে আমি যাকে সিপিএম থেকে নিয়ে এলাম এখন সেই দেখি বাড়িতে বসে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করছে।” তিনি ঠিক কাকে উল্লেখ করে এমনটা বলেছেন তা নিয়ে কানাঘুষো চলছে জোর কদমে।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনদর্শন কি সে সম্পর্কে এই প্রথম খুব স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন শুভেন্দুবাবু। তিনি জানান, “আমি কেন বিয়ে করিনি জানেন? কারন আমি বই পড়েছিলাম সতীশ সামন্ত, সুশীল ধাড়ারা বলতেন কোনও পিছান রাখা যাবে না। কেউ যেন ফোন করে দুশ্চিন্তা না করে। ৫০ বছর বয়স হতে চলল আমার। আজ আমি অকৃতদার হয়েছি।”
তাঁর আরও মন্তব্য, “লক্ষণ শেঠের কেন পতন হয়েছিল জানেন? তিনি যখন পায়জামা পাঞ্জাবী পরে কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে রানীচকে শ্রমিক ভবনে বসতেন তখন মানুষ তাঁর সঙ্গে ছিল। কিন্তু তিনিই যখন বিদেশী কলম, ঘড়ি, চশমা, রঙিন দামী জামা কাপড় পরতে শুরু করলেন, রানীচক ছেড়ে হাতিবেড়িয়ায় প্রাসাদ করলেন শ্রমিকদের বেতনের টাকা কেটে তখন তাঁকে জনগন পরিত্যাগ করল।”
শুভেন্দুবাবুর জোরাল মন্তব্য, “আমি প্যারাসুটেও নামিনি, লিফটেও উঠিনি। কলেজ রাজনীতি থেকে শুরু করে আজ এখানে পৌছেছি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে আমি উঠেছি। কোনও ছোট লোককে দিয়ে কিছু বললে ভাবছে আমি তার উত্তর দেব। অতটা নীচু মানের আমি নয়।”
তাঁর আরও মন্তব্য, “কুকুর পায়ে কামড়ালে মানুষ তার পায়ে কামড়ায় না। আমি লক্ষ্মণ শেঠ বিনয় কোঙারদের যোগ্য জবাব দিয়েছি। আমি লড়ে দেখিয়ে দিয়েছি, কাউকে আমি ভয় পাই না। ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে বড় শহীদ দিবস সমাবেশ করব। যেখানে গোটা নন্দীগ্রামের সঙ্গে খেজুরিও থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।” তাঁর এই শেষ মন্তব্য ঘিরেই এখন জোরদার আলোড়ন শুরু হয় গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। কাকে উদ্দেশ্য করে তাঁর এই মন্তব্য তা নিয়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা।