নিউজবাংলা : মে মাস থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চারবার রেপো রেট বাড়িয়েছে। যা ছিল ৪ শতাংশ, হয়েছে ৫.৯০ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই চালানোর মধ্যেই এই সুদ বৃদ্ধির সঙ্কটে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। কারণ, যতবার রেপো রেট বৃদ্ধি পায়, ততবারই বাড়ি ও গাড়ির ব্যাঙ্কঋণ বাবদ সুদের হার বেড়ে চলে। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের ইএমআইয়ের খরচ লাফ দিয়ে বেড়েছে বিগত কয়েক মাস ধরে। আর তারই লাভের ফসল ঘরে তুলেছে ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর।
গত সপ্তাহ থেকে একের পর এক ব্যাঙ্কের আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের মুনাফা ফুলে ফেঁপে উঠছে। কারণ, বাড়ি ও গাড়ির জন্য ঋণ নেওয়া সাধারণ মানুষের প্রদান করা সুদের হার অনেক বেড়ে যাওয়ায় ইএমআই বাবদ ব্যাঙ্কগুলির আয় বেড়ে চলেছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২০২২ সালের এই একই ত্রৈমাসিকে দেখা গিয়েছে, কোনও ব্যাঙ্কের মুনাফা বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। কোনও ব্যাঙ্কের ৫৮ শতাংশ। কোনও ব্যাঙ্কের ৩১ শতাংশ।
সবথেকে মুনাফার পাহাড় রচনা করেছে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক। ২০২১ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্কের মুনাফা ৭৪ শতাংশ বেশি হয়েছে। যা সর্বকালীন রেকর্ড। অর্থাৎ একটি ত্রৈমাসিকে এই পরিমাণ রেকর্ড মুনাফা আর কখনওই হয়নি। স্টেট ব্যাঙ্কের এই ত্রৈমাসিকে মুনাফা হয়েছে ১৩ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। যা ২০২১ সালের এই ত্রৈমাসিকে ( জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) ছিল ৭ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। ক্ষুদ্রশিল্প এবং কৃষিঋণ বাবদ মুনাফা বৃদ্ধি যথাক্রমে হয়েছে ১১ এবং ১৩ শতাংশ।
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার মুনাফা বৃদ্ধি হয়েছে ২৭ শতাংশ। ৩১৮ কোটি টাকা তিন মাসেই মুনাফা হয়েছে। এই ২৭ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধির মধ্যে ২৫ শতাংশই সুদের মাধ্যমে। অর্থাৎ রেপো রেট বৃদ্ধির সুফল৷ ব্যাঙ্ক অব বরোদার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মুনাফা হয়েছে ৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। যা বিগত বছরের এই সময়সীমার তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি।
ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে। যা ১২ শতাংশ বেশি। ১২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা মোট আয় হয়েছে এই সময়সীমায়। ৭০ শতাংশের বেশি মুনাফা করেছে বেসরকারি অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। মোট আয় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের মুনাফা ২৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
পরপর দুই বছরের মুনাফা ৪৮ হাজার কোটি টাকা স্পর্শ করেছে। সোজা কথায়, একদিকে রেপো রেট বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে পেট্রপণ্যের উচ্চ মূল্য। সাধারণ মানুষের উপর চরম আর্থিক বোঝা চাপলেও, সরকারের জন্য বড়সড় সুসংবাদ নিয়ে এসেছে। কারণ সরকারি ব্যাঙ্ক এবং তেল সংস্থাগুলির বিপুল মুনাফায় রাজকোষের স্বাস্থ্য ফেরাতে সমর্থ হচ্ছে সরকার।
- সংবাদ সূত্র-বর্তমান পত্রিকা