নিউজবাংলা ডেস্ক : আগেও একাধিকবার চিকিৎসার জন্য ওড়িশায় গিয়েছিলেন ওরা। তবে এবার যে আর বাড়ি ফেরা হবে না তা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি দুর্ঘটনায় মৃতের পরিজনেরা। সোমবার রাতে ওড়িশার জাজপুরের বারাবাটিতে প্রায় ২০ ফুট উঁচু ব্রিজ থেকে (Bus Accident) ছিটকে পড়া বাসটিতে যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে তারমধ্যে ৪ জন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। প্রশাসনের তৎপরতায় দ্রুততার সঙ্গে মৃতদের পরিচয় উদ্ধারের পর তাঁদের পরিবারগুলিকে এই বিষয়ে খবর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাড়ির সদস্যের আচমকা মৃত্যুর ঘটনায় হতচকিত পরিবারগুলি। এই দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে থাকা একমাত্র মহিলা নন্দীগ্রামের খোদাবাড়ির বর্নালী বেরা দাস (৪০)। সঙ্গে ছিলেন স্বামী চন্দন দাস। তিনিও গুরুতর জখম হয়েছেন। চন্দনের পিসতুতো দাদা গৌরহরি দাস জানান, “বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বামী ও স্ত্রী দুজনে ওড়িশায় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন। সেদিন চন্ডীপুর থেকে ওড়িশাগামী বাসে চেপেছিলেন তাঁরা। পরে চিকিৎসা শেষে জগন্নাথ দর্শন করতে পুরীতেও গিয়েছিলেন।
তিনি জানান, “সোমবার সন্ধ্যে নাগাদ পুরী থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ওই দম্পতি। ছেলে পড়াশোনার জন্য ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। আচমকা এমন দুর্ঘটনার খবরে আমরা সকলেই শোকাহত”। গৌরহরি জানান, “এই মুহূর্তে মৃতদেহটিকে দ্রুত বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ভাইকেও সুস্থ অবস্থায় বাড়িতি ফিরিয়ে আনাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য”।
ভুপতিনগর থানার উড়উড়ি গ্রামের বাসিন্দা উত্তম মাইতির আত্মীয় শুভঙ্কর কামিল্যা জানান, “উত্তমবাবু গত ৯ এপ্রিল ওড়িশার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। সোমবার তিনি বাসে ওঠেন বাড়ি ফেরার জন্য। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও তিনজন আত্মীয়। দুর্ঘটনার কিছু সময় পরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। স্ত্রী গুরুতর জখম হয়েছেন। ছেলে, মেয়ে ও আত্মীয়রা সকলেই আহত অবস্থায় কটকে চিকিৎসাধীন”। তিনি জানান, “দেহটিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে সাহায্য করা হচ্ছে। দেহ ফিরিয়ে আনার পর সেটির সৎকার করা হবে”।
আরও পড়ুন – ওড়িশা থেকে কলকাতা ফেরার পথে ব্রিজ থেকে উল্টে পড়ল যাত্রীবাহী বাস, মৃত কমপক্ষ্যে ৫ আহত ৩৫ !
এই দুর্ঘটনায় মৃত এগরার এগরা ২ ব্লকের দুবদার বাসিন্দা অচিন্ত মাইতির আত্মীয় রাজকুমার দুয়ারী জানান, “গত ৪ দিন আগে পুরীর মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য পরিবারের ৯ জন সদস্য ওড়িশায় গিয়েছিলেন। সোমবার ৩ জন ওড়িশায় থেকে গেলেও বাকীরা ওই অভিশপ্ত বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাতেই আমরা খবর পাই বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। রাতেই আমাদের পরিবারের কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারি অচিন্ত্য মাইতির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও কয়েকজন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ওড়িশায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬ জন বাসিন্দার আঘাত ততটা গুরুতর নয়। তাই তাঁদের পূর্ব মেদিনীপুরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এখানে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা সুস্থ আছেন তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সামান্য আহত ৫ জন কটকে তাঁদের আত্মীয়দের চিকিৎসার দেখভাল করতে থেকে গিয়েছেন। এবং এই রাজ্যের বাকী ১০ জন গুরুতর আহত অবস্থায় কটকের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার দেখভালের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসনের একটি টিম কটকেই থাকছেন।
আরও পড়ুন – কলকাতা নয়, ওড়িশা থেকে যাত্রী নিয়ে বাসটি ফিরছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে !