নিউজবাংলা ডেস্ক : হুবহু তৃণমূল প্রার্থীর নামের নকল। কাঁথি লোকসভা আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনের একেবারে শেষ মুহূর্তে নির্দল প্রার্থী উত্তম বারিকের মঞ্চে আবির্ভাব। মনোনয়ন জমার পরেই আবার রীতিমতো গায়েব এই নির্দল প্রার্থী। যা ঘিরে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল। এক সময় এই কায়দাতেই বিরোধী (Loksabha Election 2024) ভোটবাক্সে সিঁধ কাটতে প্রতিদ্বন্দ্বীর নামের ডুপ্লিকেট প্রার্থীকে হাজির করানোর অভিযোগ উঠত লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে। এবার কাঁথিতেও তৃণমূলের ভোট ভাগাভাগিতে বিজেপির তুরুপের তাস কি সেই লক্ষ্মণ মডেল? প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল শিবির। যদিও এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায় অস্বীকার করেছে বিজেপি নেতৃত্বরা।
সূত্রের খবর, কাঁথি লোকসভা আসনে মোট ন’জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যেই একজন রামগনর-১ ব্লকের বাধিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা উত্তম বারিক। মনোনয়নের একেবারে শেষদিন বিকেল ৩টের সময় প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন ফাইল করেছেন তিনি। কাঁথি লোকসভা আসনে তাঁর মনোনয়নের নেপথ্যেও বিজেপি সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলেই অভিযোগ তৃণমূলের। মনোনয়নের পরেই উত্তম উড়িষ্যায় গিয়ে ‘সেফ সেল্টার’এ রয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে দাবী।
- কে এই উত্তম ?
রামনগর থানার দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের উত্তমের আয় মোটের উপর খুবই সামান্য। এর আগে কোনওদিন ভোট ময়দানে নেমেছেন কিনা তার কোনও অতীত রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। নির্দল উত্তমের হাতে রয়েছে সর্বমোট ৩০ হাজার টাকা নগদ। নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১,১৩২.১৭টাকা এবং নির্বাচনী অ্যাকাউন্টে ১ হাজার টাকা। তাঁর নামাঙ্কিত কৃষি জমির পরিমান ২৬ ডেসিমল যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা এবং ৮ ডেসিমল অকৃষি জমি যার বাজার মূল্য প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তাঁর ওপর কেউই নির্ভরশীল নয়। এহেন উত্তম আচমকা ভোট ময়দানে কেন? প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল।
এবার কাঁথি কেন্দ্রে যুযুধান লড়াইয়ের ময়দানে বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারীর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের উত্তম বারিক। জেলা পরিষদের সভাধিপতি, বিধায়ক উত্তমের প্রভাব প্রতিপত্তি ও সাংগঠিক ক্ষমতা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। সেই উত্তমের ভোট বাক্সে সিঁধ কাটতেই এই নির্দল উত্তম বারিককে ভোট ময়দানে হাজির করার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলেই বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তৃণমূল নেতৃত্বরা।
কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি পীযূষকান্তি পণ্ডা বলেন, কাঁথি লোকসভায় হারের আতঙ্কে ভুগছে বিজেপি। সেই আতঙ্ক থেকেই আমাদের প্রার্থীর নামের সঙ্গে মিল থাকা ব্যক্তিকে খুঁজে মনোনয়ন জমা করিয়েছে। তারপর ওই প্রার্থীকে ওড়িশায় নিয়ে গিয়ে নিজেদের নজরদারির মধ্যে রাখছে। এসব করে কোনও কাজ হবে না। বিজেপি কাঁথি আসনে তাদের হার এড়াতে পারবে না।
পাল্টা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, আমরা ভোটে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করাতে যাব কেন? ২১ বছর বয়সি যে কোনও নাগরিক ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তৃণমূল হেরে যাওয়ার ভয় পেয়েছে বলেই নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে।
প্রসঙ্গতঃ ২০০৯ সালে ঠিক এটাই করেছিলেন তমলুক লোকসভার তৎকালীন সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠ। মারিশদা থানার তেঁতুলমুড়ি গ্রামের সিপিএম নেতা ষষ্ঠীচরণ অধিকারীর ছেলেকে তমলুক লোকসভায় দাঁড় করিয়েছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে নামের মিল থাকায় এই কৌশল নিয়েছিলেন। যদিও শেষমুহূর্তে ভোট ময়দান থেকে সরে দাঁড়ান ষষ্ঠীচরণবাবুর ছেলে। এই মুহূর্তে তিনি কাঁথি পুরসভার কর্মী।