কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর : ২০১৩ সালে জেল খাটেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেবছরই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন উত্তম বারিক। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে সেই উত্তম’ই আসীন হলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে। তাঁকে মঙ্গলবার এই পদে বসালেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাবড় নেতানেত্রীদের পেছনে ফেলে এত কম সময়ে মমতার সুনজরে চলে আসা উত্তমের নজরকাড়া উত্থান কিন্তু যথেষ্ট শোরগোল ফেলে দিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে উত্তমের আগমণ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণের ফল। একদিকে যেমন কাঁথির রাজনীতিতে একচেটিয়া ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা রামনগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কারামন্ত্রী অখিল গিরির ওপর রাশ টানা অন্যদিকে জেলা পরিষদের মাথায় থাকা নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা মমতার নির্বাচনী এজেন্ট সেক সুফিয়ানের ক্ষমতা কিছুটা খর্ব করা। এরই পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুক কাঁথি শহরকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া।
কিন্তু কে এই উত্তম ? কাঁথি ২নং ব্লকের সরদা অঞ্চলের বোটসাউড়ি গ্রামের শিক্ষক পরিবারে ১৯৭৩ সালের ৬মে জন্ম উত্তম বারিকের। বরাবরই ডানপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত উত্তম প্রথম থেকেই ছিলেন কংগ্রেসের বিশ্বস্ত কর্মী। ২০১১ সালে রাজ্যে যখন পালাবদল ঘটে তখনও তিনি কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করেননি। কংগ্রেসে থাকাকালীনই একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুর টেলি টাওয়ার অ্যাসোসিয়েশানের সম্পাদক পদে আসীন হন উত্তম। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই একাধিক অভিযোগে প্রায় ৫৯ দিন জেলবন্দী ছিলেন তিনি। উত্তম ঘনিষ্ঠদের দাবী, তৃণমূলের কলকাঠিতেই সেদিন জেল খেটেছিলেন তিনি। তবে জেল থেকে বেরিয়েই তিনি তৃণমূলে যোগ দেন।
এরপর ধীরে ধীরে নিজের দক্ষ সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাঁথি ২ ব্লক থেকে জেলা পরিষদের আসনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন উত্তম। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে কাঁথি থেকে সুদূর পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে গিয়ে বিজেপিকে টক্কর দিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি পুরসভা নির্বাচনে নিজের প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করে অখিল গিরি শিবিরকে রীতিমতো ধাক্কা দিয়েছিলেন উত্তম। শুভেন্দুর খাস তালুকে দাঁড়িয়েও দলকে বিপুল ভোটে জয় এনে দেওয়ার বড় কৃতিত্বই এই উত্তমের ছিল বলেই মত তৃণমূলের অন্দরে।
দায়িত্ব পাওয়ার পর উত্তম জানান, “দলনেত্রীর নির্দেশ মেনেই আজীবন কাজ করে চলেছি। আগামী দিনে নেত্রীর নির্দেশ মতোই গ্রামীন রাস্তা ও বাংলার বাড়িকে বেশী করে প্রাধান্য দেওয়া হবে”। তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির অভিযোগ করছেন তাঁদের প্রতি উত্তমের বার্তা, “দুর্নীতির অভিযোগ যারা করছেন তাঁরা সামনে থেকে প্রমাণ করতে পারবেন না কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে। যারা কাজ করেন না তাঁরা সব জায়গাতেই দুর্নীতি ও সমস্যা দেখতে পান”।
তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র জানান, “দলনেত্রী প্রশ্ন রেখেছিলেন কাকে আমরা সভাধিপতি হিসেবে দেখতে চাই। আমরা বলেছিলাম, দিদি আপনি যাকে নির্বাচন করবেন তাঁকেই আমরা মেনে নেব। এরপরেই দলনেত্রী পটাশপুরের বিধায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম বারিকের নাম ঘোষণা করেন। এবং নির্দেশ দেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকারী পদ্ধতি মেনে উত্তমকে দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে”।
মোবাইলে নিউজ আপডেটপেতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন, ক্লিক করুন Whatsapp