নিউজবাংলা ডেস্ক : গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বাংলার স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল, কেরলের সি ভি আনন্দ বোস। তার ঠিক ৬ দিন বাদে কলকাতার রাজভনে শপথ নিতে চলেছেন তিনি। মঙ্গলবারই কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে তিনি রাজভবনে পা রেখেছেন। আজ প্রথা মেনে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বাংলার নতুন ও স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে সি ভি আনন্দ বোস’কে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।
তাঁর চাকরি জীবনের শুরু হয়েছিল কলকাতায় শ্যামবাজার চৌরঙ্গির স্টেট ব্যাঙ্কের শাখায়। থাকতেন রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। আর পঁয়তাল্লিশ বছর পরে সেই মানুষটির নতুন ঠিকানা হতে চলেছে কলকাতার রাজভবন। জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে গিয়ে রাজ্যপালের পদ ছেড়ে দেওয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন মণিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশন। কয়েক দিন আগেই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেরল ব্যাচের প্রাক্তন আইএএস অফিসার বোসকে স্থায়ী রাজ্যপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দিল্লীতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, “আমি বাংলা শিখছি।” তাঁর দাবি, তিনি চেহারাতেই মালয়ালি। মন থেকে বাঙালি। বাবা সুভাষচন্দ্র বসুর ভক্ত ছিলেন বলে জন্মের পরেই নামের সঙ্গে ‘বোস’ জুড়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল, কেরলের সি ভি আনন্দ বোস অবশ্য তাঁর সাংবিধানিক ভূমিকা নিয়ে নিঃসংশয়। শুক্রবার একান্ত আলাপে বোস বলেন, “আমার দায়িত্ব হবে, রাজ্য সরকার যাতে তার সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যেই কাজ করে, তা দেখা।“
আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা প্রসঙ্গে আনন্দ বোসের স্পষ্ট মন্তব্য, “আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি। রাজনৈতিক নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নয়”।
তাঁর ইঙ্গিত, রাজ্য সরকার সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যে থেকে কাজ করলে তিনিও সহযোগিতা করবেন। মোদী জমানায় রাজ্যপালের দফতরকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানার মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যে রাজ্যপালরা বিজেপি নেতানেত্রীর মতো আচরণ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
২০১১-তে আইএএস-এর চাকরি থেকে অবসর নেওয়া আনন্দ বোসের শান্ত কণ্ঠে জবাব, “যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, তখনও সংঘাত হয়েছে। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মতপার্থক্য নতুন নয়৷ এটা কোনও সমস্যাও নয়। মতভেদ গণতন্ত্রের অংশ। ইচ্ছে থাকলেই সমাধান হয়। আমি বাংলার মানুষের উপরে আস্থা রাখি। তাঁরা ঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।”.
বর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে তৃণমূল সরকারের সংঘাত নতুন রাজ্যপালের অজানা নয়। তা নিয়ে প্রশ্নে আনন্দ বোস বলছেন, “জগদীপ ধনখড় দেশের উপরাষ্ট্রপতি। তাঁকে সম্মান করি। আমি নিজের স্টাইলে কাজ করব।” তাঁর আশ্বাস, তিনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে ‘নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা’ বজায় রেখেই চলবেন। আর সেই কারণেই ‘রাজ্যপাল হিসেবে কোনও চ্যালেঞ্জ’-এর আশঙ্কাও তিনি করছেন না।
অন্যদিকে বাংলার নতুন রাজ্যপালকে স্বাগত জানিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘নতুন রাজ্যপালকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা। ওঁর সম্পর্কে যা শুনেছি, তাতে মনে হয় উনি দারুণ কাজ করবেন।’’