নিউজবাংলা : স্ত্রী’র হাতে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছেন সরকারি পদাধিকারী ‘হেভিওয়েট’ সব স্বামী৷ বাদ থাকছেন না সাধারণ মানুষও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের সত্যতা মিলছে। স্বামীর উপর স্ত্রী’রা রণংদেহী হয়ে উঠায় ভেঙে যাচ্ছে বহু সংসার। চলতি নভেম্বর মাসে শুধু আসানসোল মহিলা থানাতেই সাতটি অভিযোগ জমা পড়েছে। শুধু আসানসোলেই নয়, এ ধরনের অভিযোগ জমে পাহাড় হচ্ছে দুর্গাপুর মহিলা থানাতেও।
প্রতিটি অভিযোগ স্ত্রীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে। অসহায় স্বামীরা বিনিত ভাবে অনুরোধও করছেন—‘দেখবেন, স্ত্রী মারার ঘটনা যেন বাইরে না শিল্পাঞ্চলে এই উলট পুরাণ”-এর সমস্যা কথা জানিয়েছে পুলিসের একটি সূত্র। জানা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করেই সংসারে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করছেন মহিলা পুলিস কর্মীরা।
একজন সরকারী দফতরের কর্তা। অফিসে তাঁর বেজায় মেজাজ। গেটের নিরাপত্তারক্ষী থেকে অফিসের বড়বাবু—তাঁকে বেশ সমঝে চলেন। কিন্তু ঘরে যেন ‘ভিগি বিল্লি’! তারপরও নিস্তার নেই। পান থেকে চুন খসলেই বিপত্তি। রুটি তৈরি করার বেলোনি নিয়ে তেড়ে আসেন স্ত্রী। পিঠেও পড়ে যায় দুমাদুম।
দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী’র এমন নির্যাতন থেকে বাঁচতে মুখ খুলেছেন তিনি। অভিযোগের ফিরিস্তি নিয়ে মহিলা থানায় হাজির। পুলিসের তরফে স্ত্রীর কাউন্সেলিং করা হয়েছে বলে খবর। এই একই অবস্থা সরকারি দপ্তরের আর এক ‘বাঘা’ ইঞ্জিনিয়ারেরও। তাঁর ঘরণীও বেশ ‘ভয়ঙ্করী’। এতদিন লোক-লজ্জার ভয়ে চুপচাপই ছিলেন। এখন না পেরে মহিলা থানায়।
অন্যজন এক প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার৷ সরকারি সংস্থায় দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন বহু বছর। এখন অবসর জীবন। বউমাকে নিয়ে একমাত্র ছেলে বাইরে থাকেন। বড় ফ্ল্যাটে বুড়োবুড়ির সংসার। একে অপরের অবলম্বন। সেই অবলম্বনের বোঝাপড়ায় এখন অশান্তির ঘনঘটা। মারধর। অগত্যা, একটু শান্তির খোঁজে অবসর যাপনের সুখ ছেড়ে আসানসোল মহিলা থানায় ছুটছেন বৃদ্ধ৷ আর্জি রাখছেন—‘একটা কিছু করুন ম্যাডাম। এই বয়সে এসব আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়!’ ফোনে পুলিসের ধমক খেয়ে বৃদ্ধের স্ত্রী আপাত শান্ত।
আসানসোল জেলা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় এদিন বলছিলেন, ৪৯৮ ধারার দায়ের হওয়া মামলা অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় ভুয়ো। আবার অনেক সময় নিজেরাও মীমাংসাও করে নিচ্ছেন। এখন আবার স্বামী নির্যাতনের অভিযোগও আসছে।’
অল বেঙ্গল মেনস ফোরামের সভাপতি নন্দিনী ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্ত্রীদের অত্যাচারের নতুন হাতিয়ার এখন সন্তান। সন্তানের জন্য স্বামীর কাছে খোরপোষ নেব, অথচ বাবাকে তাঁর সন্তানকে দেখার সুযোগটুকু দেব না। এই নিয়েই ঝামেলা বাঁধছে। নানা মানসিক অত্যাচারে জর্জরিত হচ্ছেন স্বামীরা৷’