নিউজবাংলা : বাংলায় নামতে চলেছে তাপমাত্রার পারদ। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, দক্ষিণ ভারত সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি স্থলভূমিতে ঢুকে পড়লেই বাংলার তাপমাত্রা ফের কমতে শুরু করবে। তবে এই মুহূর্তে নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস সমুদ্র থেকে বেশি মাত্রায় আসার ফলে উত্তরের শুষ্ক হাওয়া সক্রিয়তা হারিয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়িয়েছে। যা আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস জানান, সোমবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ১ ডিগ্রি বেশি। বেশ কয়েকদিন পর কলকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির উপরে এল। আবহাওয়াবিদদের আশা, দুই-তিন দিনের মধ্যে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে ২-৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমবে।
এদিকে ২৪ নভেম্বর নাগাদ উত্তর আন্দামান সাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে। এটি শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপ হলেও বাতাসের গতিমুখ বদলে যাওয়া এই রাজ্যে তার বিশেষ প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বাংলায় বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা না থাকায় চাষের অনুকূল আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের আশা, এরকম পরিস্থিতি থাকলে আলু সহ শীতের নানা সব্জির বাম্পার ফলন হবে।
কৃষিদপ্তরের প্রধান আবহাওয়াবিদ ডঃ মৃণালকুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, এরকম আবহাওয়া থাকলে ফলন খুব ভালো হবে বলেই মনে করা হয়। গত বছর নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের শুরুতে অসময়ের বৃষ্টি ব্যাপক ক্ষতি করেছিল শীতকালীন ফসলের। তার প্রভাব পড়েছিল বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যের বাজারদরেও। বছরভর আলুর চড়া দামের জন্য মূলত দায়ী ছিল ওই সময়ের প্রতিকূল আবহাওয়া।
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস মঙ্গলবার জানিয়েছেন, রাজ্যে বৃষ্টি হওয়ার মতো পরিস্থিতি আপাতত নেই। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। সেটির প্রভাব রাজ্যের উপর পড়বে না। আগের নিম্নচাপটির মতো এটিও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে বেশি মাত্রায় বৃষ্টি দেবে। আবহাওয়াবিদরা আরও জানিয়েছেন, গত বছর পূবালি বাতাস বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প টেনে আনার জন্য অসময়ের বৃষ্টি হয়েছিল।
এবার এখনও পর্যন্ত সেরকম পরিস্থিতি নেই। তবে শীতকালে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবেও রাজ্যে বৃষ্টি হয়। পশ্চিম হিমালয় এলাকা অতিক্রম করে কোনও ঝঞ্ঝা উত্তর ভারতের সমতল এলাকার উপর চলে এলে তার প্রভাবে এ রাজ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এবার দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমি ঝঞ্ঝা হিমালয়ে এলেও সমতলের উপরে আসার মতো পরিস্থিতি এখনও নেই।
ইতিমধ্যে নভেম্বর মাসের অর্ধেক সময় পার হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কাও বিশেষ নেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দ্বিতীয়ার্ধে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার ঘটনা খুব বেশি নেই। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির থেকেও ঘূর্ণিঝড়ের হাওয়া পাকা ধানের বেশি ক্ষতি করে। উত্তুরে হাওয়ার দাপটে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই রাজ্যে তাপমাত্রা অনেকটা কমেছে৷
কৃষিপ্রধান জেলাগুলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪-১৬ ডিগ্রির আশপাশে রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে কোথাও কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখনই ১১-১২ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। কয়েকদিন পর তাপমাত্রা সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও হাল্কা শীতের আমেজ থাকছেই।