নিউজবাংলা : এ যেন দুর্নীতিতে পরিবারতন্ত্র ! ভাই, জামাই, বেয়াই——–দুর্নীতির অংশীদার পরিবারেরই সদস্যরা। কখনও তাঁদের ‘প্রজেক্ট’-ঢালা হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। কখনও আবার তাঁদের অ্যকাউন্টে সরানো হয়েছে চাকরি বিক্রির অর্থ। ইডির (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) হাতে ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচাৰ্য—দু’জনের কেউই এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। নিয়োগ দুর্নীতির প্রায় ৭০ কোটি টাকা এভাবে ‘বিনিয়োগ’ করা হয়েছে। এমনটাই দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।
১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে বৃহস্পতিবার ইডির বিশেষ আদালতে তোলা হয় মানিককে। তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও ৩২৫ জন স্কুলে চাকরি পান। কতটাকা দিয়ে এবং কীভাবে তাঁরা চাকরি পেলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এত টাকা কোথায় লুকিয়ে রাখা রয়েছে, সে বিষয়ে বলতে গিয়েই আসে মানিকের জামাইয়ের প্রসঙ্গ।
ইডির আরেক আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, চাকরি বিক্রির টাকা গচ্ছিত রাখার জন্য মানিকবাবুর জামাইয়ের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। কেবল জামাই নন, তাঁর বেয়াই (মেয়ের শ্বশুর) ও এক ভাইয়ের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ঢুকেছে। এরকম আটটি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে ইডি। চাকরি পাওয়া ৩২৫ জনের মধ্যে কয়েকজনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিন আইনজীবীরা আদালতে নিয়োগের একটি তালিকা দেখিয়ে বলেন, বিভিন্ন ডিএলএড কলেজে অফলাইনে ভর্তি করিয়ে ২০ কোটি টাকা পেয়েছেন মানিকবাবু। মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, ২০১৭ সালের পর কোনো টেট হয়নি। অথচ লেনদেন দেখানো হচ্ছে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। তাহলে কীভাবে ৩২৫ জনের টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে? দু’পক্ষের সওয়ালের পর বিচারক অভিযুক্তকে আরও ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে, বুধবার পার্থর জামাইয়ের কাছে ইডির তদন্তকারীরা জানতে চান, পিংলায় স্কুল নির্মাণের টাকা এল কোথা থেকে? প্রথমে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাঁর শ্বশুর তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে একটি ‘চ্যাট’ তুলে ধরেন তদন্তকারীরা। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করে নেন, স্কুল করার জন্য নগদে ৫০ কোটি টাকা তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন তাঁর শ্বশুর।
তবে পার্থবাবু কীভাবে ওই টাকা পেয়েছিলেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ইডির দাবি, পার্থর জামাই স্বীকার করেছেন যে আমেরিকার পাশাপাশি কলকাতায় প্রায়ই এসে থাকতেন তিনি। স্কুলেও যেতেন মাঝেমধ্যে। তাঁর মাধ্যমে পার্থবাবু বিদেশে টাকা পাচার করেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।