নিউজবাংলা : নতুন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বসুর ভূমিকায় তাঁরা যে সন্তুষ্ট নন, এ বার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যে প্রকাশ্যেই তার ইঙ্গিত মিলল। বিজেপির আর এক বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতিরও অভিযোগ, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ না করে রাজ্যপাল বরং মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের প্রশংসা করে চলেছেন।
রাজ্যপাল বোসের ভূমিকা তাঁরা যে ভাল চোখে দেখছেন না, এর আগে শুভেন্দু সেই মনোভাবের কথা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। এ বার তাঁদের সেই মনোভাব প্রকাশ্যে চলে আসায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা কটাক্ষ করে বলছে, রাজভবনকে দলীয় দফতরে পরিণত করাই বিজেপির অভ্যাস। সেটা আপাতত করা যাচ্ছে না বলেই তাদের রাগ (Bengal Political Battle)।
শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানাতে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক গিয়েছিলেন রাজ্যপালের কাছে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা স্পষ্টই বলেছেন, “রাজ্যপালের এখানে কিছু করার আছে বলে আমার মনে হয় না।” শুভেন্দুর আস্থা কেন্দ্রীয় সংস্থা আর আদালতে।
দেশের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এগরার বালিঘাইতে রবিবার দলীয় কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ওই বিস্ফোরণ নিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “এটা এনআইএ তদন্তের জন্য উপযুক্ত৷ হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সন্ত্রাস কবলিত এলাকার মানুষ সুবিচার পাবেন বলে আদালতের উপরে আমার আস্থা রয়েছে। এবং এটা হবেই।”
গত ২ ডিসেম্বর ভগবানপুর অর্জুননগর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নাড়ুয়াবিলা গ্রামে তৃণমূলের ব্লকের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়ি বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে যায়। রাজকুমার-সহ মৃত্যু হয় তিন জনের। ঘটনার তিন সপ্তাহ পরেও পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করছে না, এই অভিযোগ নিয়েই গত ২৩ ডিসেম্বর রাজভবনে গিয়েছিলেন ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি। বিস্ফোরণ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি এবং ছবি রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন তিনি।
তার দু’দিনের মধ্যে বিরোধী দলনেতা রাজ্যপালের উপরে কার্যত ‘অনাস্থা’ প্রকাশের পরে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথও সোমবার বলেছেন, “গোড়া থেকে বর্তমান রাজ্যপাল যে ভাবে শাসক দল এবং রাজ্য সরকারকে প্রশংসায় ভরিয়ে তুলছেন, তাতে হয়তো বিরোধী দলনেতা বিরক্ত। আমরাও দেখছি, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কী আর রাজ্যপাল কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করছেন। উনি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না”। তা হলে তিনি রাজ্যপালের কাছে গেলেন কেন? বিজেপি বিধায়কের জবাব, “রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল। তাই এলাকায় সন্ত্রাসের বিহিত চেয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। যাবতীয় নথিও দিয়ে এসেছি।”
বাংলায় জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের থাকাকালীন সমালোচনায় নিয়মিত প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতেন। তার রেশ টেনে রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরিও কটাক্ষ করেছেন, “বিরোধী দলনেতা যে ভাবে চালাতে চাইছিলেন, হয়তো সে কথা শোনেননি রাজ্যপাল। তাই এ ধরনের মন্তব্য করছেন! আর আপাতত কেন্দ্রীয় সংস্থা-নির্ভর রাজনীতি করতে চাইছেন।”
–আনন্দবাজার পত্রিকা