নিউজবাংলা : রাজ্য সরকারের আধিকারীকদের সঙ্গে নিয়ে বাছাই করা কিছু স্কুলের মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। যার ফল স্বরূপ আগাম সূচনা পেয়ে অ্যাপ্রণ, গ্লাভস, ও মাথায় ক্যাপ পরে পরিপাটি হয়ে থাকছেন রাঁধুনিরা। ঝাঁ চকচকে করে নেওয়া হচ্ছে রান্নাঘরের পরিসর। যা সম্পূর্ণ সাজানো বলেই অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
মঙ্গলবার ট্যুইট করে এই বিষয়ে নিজের ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)। তাঁর মতে, “এটা এমন যেখানে বাস্তবতার সন্ধানে আপনি তাদের উপর নির্ভর করছেন, যারা সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার এবং গোপন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। রান্নার কর্মীদের সময়ের আগেই বেতন দেওয়ার কথা জানিয়ে তাঁদের দিয়ে রীতিমতো খেলানো হচ্ছে”। শুভেন্দু আরও সংযোজন, “আমি অবাক হব না যদি এটা জানতে পারি যে, স্কুল ছাত্রদের হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে”।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দুর পরামর্শ, “তাঁদের উচিত, এলোমেলোভাবে স্কুল নির্বাচন করে সেখানে হঠাৎ করে পৌঁছে যাবেন। এবং স্কুলগুলির গাফিলতি হাতেনাতে ধরবেন”। প্রসঙ্গতঃ গতকাল সোমবার সকালে বিকাশ ভবনে রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন এবং অন্যান্য কর্তার সঙ্গে বৈঠক করে ১১ জন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি বেরিয়েছিলেন স্কুলে খাবারের হাল দেখতে। দলের প্রধান পুষ্টিবিদ অনুরাধা দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, “মিড-ডে মিলের মান যাচাইয়ে ৩২টি সূচক আছে। সেই সব সূচকের ভিত্তিতে সব খতিয়ে দেখা হবে। এটা রুটিন পরিদর্শন। সব রাজ্যেই চলছে।”
Central Inspection Team’s being led by WB Govt Officials to a few handpicked schools to review Mid Day Meal implementation.
Result – Cooking staff wearing aprons & gloves. Neat & clean kitchen.
They should randomly select the school & reach there abruptly to catch them off guard. pic.twitter.com/VLGSSDrkMK— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) January 31, 2023
বিকাশ ভবন থেকে প্রতিনিধিদের গাড়ি ছুটে যায় রাজারহাটে। সঙ্গে রাজ্যের প্রতিনিধিরা। রাজারহাটের বনমালীপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছবির মতো সাজানো ফুলের বাগান। মিড-ডে মিলের নির্দেশাবলি স্পষ্ট করে লেখা দেওয়ালে। রান্নাঘরে গ্লাভস, মাস্ক, অ্যাপ্রন, মস্তকাবরণ পরে রান্না করছেন কর্মীরা। আপনারা কি রোজই গ্লাভস, অ্যাপ্রন পরে রান্না করেন? মাথা নাড়লেন কর্মীরা।
অনুরাধা রান্নাঘরে ঢুকে বাংলাতেই কর্মীদের জিজ্ঞেস করলেন, কতটা চাল নেওয়া হয়েছে? ক’জন বাচ্চা উপস্থিত? এক কর্মী বললেন, ৮১ জন পড়ুয়ার জন্য সাত কিলোগ্রাম চাল নেওয়া হয়েছে। কম নয়? মাথাপিছু তো ১০০ গ্রাম চালও হচ্ছে না? অনুরাধার প্রশ্নের জবাবে কর্মী বলেন, সবাই ১০০ গ্রাম চালের ভাত খায় না। ডিমের ঝোল, ভাত আর আপেল ছিল মেনুতে। ডিমের ঝোলের জন্য সাত কেজি আলু নেওয়া হয়েছে শুনে একটু অবাকই হলেন অনুরাধা। কর্মীরা জানালেন, বাচ্চারা আলু খেতে ভালবাসে। তাই আলু বেশি নেওয়া হয়েছে।
মুখ ঘুরিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের কালিকাপুর বাসন্তীদেবী বালিকা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হল কনভয়। তত ক্ষণে পড়ুয়াদের খাওয়া শেষ। তবু মিড-ডে মিলের কর্মীরা ঝকঝকে নতুন টুপি, অ্যাপ্রন পরে আছেন। রাঁধুনিরা জানান, মেনুতে ছিল মটরশুঁটি ও টোম্যাটো দিয়ে বাঁধাকপির তরকারি, ডাল, ডিম সেদ্ধ। খাওয়ার পরে হাত ধোয়ার জায়গা, রাঁধুনিদের হাত কতটা পরিষ্কার, নখ কাটা আছে কি না— সবই খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হল।
অভিযোগ, এই অ্যাপ্রন এবং গ্লাভস রোজ থাকে না। যদিও এই অভিযোগ পৌঁছয় না দিল্লির প্রতিনিধিদের কাছে। দিল্লির প্রতিনিধিদলের এ ভাবে স্কুলের খাবার পরিদর্শন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শিক্ষক সংগঠনদের একাংশে। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর প্রশ্ন, “এ ভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে এসে কী লাভ?” এবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও সেই একই প্রশ্ন তুলে শোরগোল ফেলে দিলেন।